গত আট মাস আগে নরসিংদীর শিবপুরের ধানখেত থেকে রবিউল ইসলাম (১৯) নামের এক অটোরিকশাচালকের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। অনলাইন জুয়া ও নেশার টাকা জোগাড় করতে মাদক কারবারিরা রবিউলকে অটোরিকশাটিকে হাত করার পরিকল্পনা করেন। এরপর তারা রবিউলকে হত্যা করে অটোরিকশাটি ছিনিয়ে নেন।
ওই ঘটনায় রবিউলের মায়ের করা হত্যা মামলাটি তদন্ত করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এ তথ্য পায়।
পরে আজ বুধবার (৩ জুলাই )দুপুরে ঢাকার ধানমন্ডিতে পিবিআইয়ের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।
গত বছরের ২৪ নভেম্বর থেকে চলতি বছরের ২৬ জুন পর্যন্ত গত সাত মাসে পিবিআই ওই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে এ সময় তাঁদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ছিনতাই হওয়া অটোরিকশা ও হত্যায় ব্যবহৃত একটি চাপাতি।
আজকের সংবাদ সম্মেলনে পিবিআই নরসিংদী জেলার পুলিশ সুপার মো. এনায়েত হোসেন মান্নান বলেন, গত বছরের ২৯ অক্টোবর সকালে খবর পেয়ে নরসিংদীর শিবপুর থানার সাত পাইকা পাকা রাস্তার পাশে ধানখেত থেকে অজ্ঞাত ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে পিবিআই নরসিংদী পুলিশ।
ওই দিনই তাদের ফেসবুক পেজে লাশের ছবি পোস্ট করা হয়। তা দেখে স্বজনেরা রবিউলের পরিচয় শনাক্ত করেন। ওই ঘটনায় তাঁর মা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে শিবপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটি পিবিআই নরসিংদী তদন্তের দায়িত্ব নেয়।
পুলিশ সুপার এনায়েত হোসেন বলেন, হত্যাকাণ্ডের কোনো সূত্র ছিল না। তারপরও গত ২৪ নভেম্বর শিবপুরে চোরাই অটোরিকশা বেচাকেনায় জড়িত সন্দেহে রাকিবুল ইসলাম (২০) নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি বলেন, ছিনতাই হওয়া অটোরিকশাটি বিক্রিতে তিনি নাহিদ শেখ (২২) নামের এক যুবককে সহায়তা করেছেন। পরে ওই দিনই নাহিদকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তবে রবিউলকে হত্যায় করার বিষয়টিতে রাকিবুল জড়িত নন বলে দাবি করেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই নরসিংদী জেলার উপপরিদর্শক (এসআই) সাদেকুল শিকদার বলেন, হত্যাকারীরা গা ঢাকা দিয়েছিলেন। পরে বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে রবিউল হত্যায় জড়িত অভিযোগে জুবায়ের হোসেন, সাজিদুল ইসলাম, লিটন খান ও হুমায়ুনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে জুবায়ের, সাজিদুল, লিটন, নাহিদ ও হুমায়ুন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। যে তাঁরা অনলাইনে জুয়া খেলতেন ও নিয়মিত মাদক সেবন করতেন এতে প্রতিনিয়ত অনেক টাকার প্রয়োজন হতো তাদের। এসবের জন্য টাকা জোগাড় করতে তাঁরা রবিউলকে হত্যা করে তাঁর অটোরিকশা ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করেন।
এসআই সাদেকুল আরও বলেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী গত বছরের ২৯ অক্টোবর জুবায়ের, সাজিদুল ও নিহাল রবিউলের অটোরিকশা নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাঘুরি করেন ও আড্ডা দেন। একপর্যায়ে শিবপুর থানার সাত পাইকা রাস্তার পাশে সাজিদুল ও নেহাল অটোরিকশাচালক রবিউলের দুই পা চেপে ধরেন এবং জুবায়ের চাপাতি দিয়ে উপর্যুপরি কোপ দেন।
রবিউলের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর তাঁকে ধাক্কা দিয়ে পাশের ধানখেতে ফেলে দিয়ে অটোরিকশাটি নিয়ে পালিয়ে যান তাঁরা। পরে রাকিবুল, নাহিদ, জুয়েল ও হুমায়ুন অটোরিকশার রং ও মডেল পরিবর্তন করে গ্যরেজ মালিক লিটনের কাছে ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করেন।