নিজস্ব প্রতিবেদক:
খুলনার ডুমুরিয়ার খর্নিয়া ইউনিয়নের বামুন্দিয়া খাল দখলের মহোৎসব মেতে উঠেছে একটি মহল। খাল দখল করে পানিপ্রবাহ বাঁধাগ্রস্ত করার কারণে বর্ষা মৌসুমে হাজারো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, মাছের ঘের আর ফসলের জমি পানিতে একাকার হয়ে গেছে। বর্তমানে এসব এলাকায় দেখা দিয়েছে পানিবাহিত বিভিন্ন রোগ।
এলাকাবাসী জানান, একসময়ে এই বামুন্দিয়াও টিপনা খালের পানি নিয়ে ফসলের চাষাবাদ, গোসল, মানুষের দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় কাজে ও বর্ষা মৌসুমে পানি নিষ্কাশনের কাজে ব্যবহার হতো। কিন্তু কয়েক বছর যাবত খর্নিয়া ইউনিয়নের গোনালী গ্রামের, নজরুল ফকির, হালিম শেখ, স্বপন ,হান্নান শেখ, বক্কর মোল্লা সহ আরো অনেকে নেতার নেতৃত্বে ১২ একরের সামান্য বেশি খাল নেট-পাটা বসিয়ে ও বিভিন্ন স্থানে বেঁড়িবাধ নিয়ে খাল দখলের মহোৎসবে মেতে উঠেছে। ফলে চরম মানবেতর জীবন যাপন করছে উপজেলার গোনালী, টিপনা বামুন্দিয়াপাচ পোতা, ভদ্রদিয়া, খর্নিয়াসহ আরও কয়েকটি গ্রামের সাধারণ মানুষ।
ওই এলাকার লক্ষণ, হরিপদ, হাবিবুল্ল্যাহ, আবু হাসান, ফারুক ফকির, আলী, আবু মুছা, আবুল কালাম, রবিউল ইসলামসহ শতাধিক ব্যক্তি জানান, কয়েক বছর যাবত হালিমের এর নেতৃত্বে খাল খাদকরা প্রায় ১০ কিলোমিটারের অধিক লম্বা বামুন্দিয়া খালের মধ্যে মাত্র ১২ একরের সামান্য বেশি খাল ৫ কিলোমিটারের বেশি এলাকা জবরদখল করে মাছ চাষ করছে। খাল ইজারা নিয়ে সরকারি নিয়ম-নীতি না মেনে টোনা জাল ও পাটাতন নেটের বেড়া দিয়ে পানি নিষ্কাশনে ব্যাপক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। এতে কৃষিকাজ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এলাকায় পানিবাহিত রোগ দেখা দিয়েছে।
এব্যাপারে জানতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আল আমিন কাছে বলেন, আমি এখনই খোঁজ নিচ্ছি। ওই ইউনিয়নের জলাবন্ধতা দূর করার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশনাও দিয়েছি। বাধ ও পাটা উঠিয়ে স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ টিপনা ও বামুন্দিয়া খালের অবৈধ দখলমুক্ত করার জন্য প্রশাসনের নিকট জোর দাবি জানিয়েছে ভুক্তভোগী সহ সচেতন মহল।
উল্লেখ্য ডুমুরিয়া উপজেলার ০৯ নং সাহস উনিয়নের, গজেন্দ্রপুর, হুলা, বাজাবুনিয়া, টেংরামারি, পোতখালী ও হাজিবুনিয়া গ্রামের সাধারণ জনগণ। উক্ত গ্রাম গুলোর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত “পোতখালী দোয়ানিয়া” খাস খাল যাহা, ভদ্রা নদী থেকে উৎপত্তি। উক্ত গ্রামের মিষ্টি পানি ধরে রাখার একমাত্র উৎস এই খালটি। এই খালের পানি দিয়ে কৃষি কাজের সেচ ব্যবস্থা, নৌকা যোগে বিলে কৃষি উপকরণ আনা-নেওয়া করণ, উৎপাদিত সবজি সংগ্রহ করে নৌকা যোগে আনা- নেওয়া করা, খাল নির্ভর মৎস্যজীবীদের জীবন জীবিকা নির্বাহ সহ উক্ত মৌজাগুলোর সাধারণ দরিদ্র মানুষদের মাছ ধরে পুষ্টির চাহিদা মিটানোর জন্য খালটির নির্ভরশীল। কিন্তু, এলাকার কতিপয় স্বার্থন্বেষী ও সুবিধাভোগী- ফরিদ শেখ, পিতা- খালেক শেখ, গ্রাম- শরাফপুর। তোরাফ সরদার, পিতা- (মৃত) ফজর আলী, গ্রাম- শরাফপুর। আব্দুর রশিদ খান, পিতা- (মৃত) কাদের খান, আসাদ খান, পিতা- (মৃত) লতিফ খান সর্বসাং গজেন্দ্রপুর সহ একাধিক ব্যক্তি খালের মুখে আড়াআড়ি ভাবে অবৈধ নেটপাটা দিয়ে মাছ ধরে আসছে। পাশাপাশি সরকারী ভাবে নিষিদ্ধ চায়না কারেন্ট জাল দিয়ে ছোট ছোট সকল মাছের পোনা নিধন করছে। এলাকাবাসী সহ স্থানীয় ইউ পি সদস্য একাধিক বার নিষেধ করলেও তাদের কথা কর্ণপাত না করে, তাদের এই অবৈধ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। যার কারণে, এলাকার কৃষি কাজ সহ খাল নির্ভর ৬০ থেকে ৭০ টি মৎস্যজীবী পরিবারের জীবন জীবিকা নির্বাহের কাজে ব্যাপক ভাবে বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে।
এক্ষেত্রে, উক্ত মৌজা সমূহের কৃষক, মৎস্যজীবী, সাধারণ মানুষের জোড়ালো দাবী এই যে, খালের মুখের নেটপাটা সহ খাল জুড়ে একাধিক নেটপাটা অবিলম্বে অপসারণ করে এলাকাবাসীর দাবী সমূহ পূরণের জন্য আপনার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও সহযোগিতা কামনা করেছেন।