পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) এর কারিগরি সহযোগিতা ও অর্থায়নে, খুলনা নবলোক পরিষদ কর্তৃক বাস্তবায়িত সমন্বিত কৃষি ইউনিট (কৃষি খাত) এর আওতায় খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার বরাতিয়া গ্রামের কৃষক তুষার সরকারের মাধ্যমে এ ট্রাইকো কম্পোস্ট স্থাপন করেছেন।
ট্রাইকো কম্পোস্ট সার ও লিচেট ব্যবহারে কৃষকদের মধ্যে দিন দিন আগ্রহ বাড়ছে। এ প্রযুক্তিতে উৎপাদিত সার ও লিচেট ব্যবহারে উপকৃত হচ্ছেন কৃষকেরা। ট্রাইকো কম্পোস্ট সার ব্যবহারে মাটির গঠন ও বুনট উন্নত করে, পানি ধারণ ক্ষমতা বাড়ায়, পানির অপচয় রোধ করে। এই সার মাটির অম্লত্ব ও লবণাক্ত নিয়ন্ত্রণ করে। ফসলের উৎপাদন ও গুণগত মান বাড়িয়ে কৃষকের আয় বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।এছাড়া ট্রাইকো কম্পোস্ট সার উৎপাদনের সময় যে লিচেট (তরল জাতীয়) সংগ্রহ করা হয়, তা বিভিন্ন সবজি ও পানের বরজে ব্যবহার করে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধিসহ ফসলের রোগবালাই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তাই স্বল্প খরচে ও সহজ পদ্ধতিতে উৎপাদিত এই সার এবং লিচেট ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।ট্রাইকো কম্পোস্ট থেকে উৎপাদিত সার জমিতে ব্যবহার করে ভালো ফলন পেয়েছেন কৃষকেরা।
ইতিমধ্যে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার কৃষি খ্যাত বরাতিয়া এলাকার আশপাশের গ্রামের ৩০ জন কৃষক এ প্রযুক্তি দেখে সার উৎপাদন ও ব্যবহার করছেন। তাঁরা ট্রাইকো কম্পোস্ট সার উৎপাদনের সময় যে লিচেট সংগ্রহ করা হয়, তা পানের বরজ ও বিভিন্ন সবজি চাষে ব্যবহার করে ভালো ফলন পাচ্ছেন। এতে উপজেলার অন্য কৃষকের মধ্যেও এ প্রযুক্তিতে উৎপাদিত সার ও লিচেট ব্যবহারে আগ্রহ বাড়ছে।
টিন বা খড়ের চালাসহ একটি কয়েকটি পাকা চৌবাচ্চা দ্বারা বানানো হাউসে ট্রাইকো কম্পোস্ট তৈরি করতে হয়। এতে গোবর ২৮ শতাংশ, মুরগির বিষ্ঠা ৩৬ শতাংশ, সবজির উচ্ছিষ্ট ৫ শতাংশ, কচুরিপানা ২৫ শতাংশ, কাঠের গুঁড়া ৩ শতাংশ, নিমপাতা ১ শতাংশ ও চিটাগুড় ২ শতাংশ এই অনুপাতে মিশ্রণ তৈরি করা হয়। এক টন মিশ্রণ পচাতে ৫০০ মিলি ট্রাইকো ড্রার্মা অণুজীব মেশাতে হয়। এতে ৪০ থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে জৈব পদার্থ পচে ট্রাইকো কম্পোস্ট সার উৎপাদিত হয় ও লিচেট পাওয়া যায়।
ডুমুরিয়া উপজেলার বরাতিয়া গ্রামের কৃষক তুষার সরকার বলেন,বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা নবলোক পরিষদ চুকনগর শাখার কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ হুমায়ূন কবির এর পরামর্শে ট্রাইকো কম্পোস্ট সার উৎপাদন ও রাসায়নিক সারের বিকল্প হিসাবে বিভিন্ন সবজি চাষে ব্যাবহার শুরু করে ভালো ফলন পেয়েছি প্রায় দুগুন।তাছাড়া আমার বর্তামানে দশটি চেম্বার থেকে প্রথমবার ১০০ লিটার লিচেট সংগৃহীত হয়। এটা জমিতে ব্যবহার করে তিনি ভালো ফলন পেয়েছেন। বরাতিয়া গ্রামের কৃষক বিল্লাল বিশ্বাস ও একই এলাকার মহিউদ্দিন বিশ্বাস আমাদেরকে জানান।
তুষার সরকারের জমিতে বিভিন্ন সবজির ফলন ভালো হওয়ায় তার উৎপদিত ট্রাইকো কম্পোস্ট সার ও লিচেট স্বল্প মুল্যে ক্রয় করে বিভিন্ন প্রজাতির সবজিচাষে ব্যাবহার করে এ বছর ফলন বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ, আর সবজির বাজারে চাহিদা বেশি থাকায় লাভ হচ্ছে বেশ।
নবলোক পরিষদ চুকনগর শাখার কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ হুমায়ূন কবির আমাদের প্রতিনিধিকে জানান,“ট্রাইকো কম্পোস্ট এক ধরনের জৈব সার, যার মূল উপাদান ট্রাইকোডার্মা নামক উপকারী ছত্রাক। বিভিন্ন জৈব উপাদান, যেমন গোবর, মুরগির বিষ্ঠা, সবজির উচ্ছিষ্ট, কচুরিপানা, কাঠের গুঁড়া, ভুট্টার ব্রান, চিটাগুড়, ছাই ও নিমপাতা এবং ট্রাইকোড্রার্মা ছত্রাকের অণুবীজ নির্দিষ্ট অনুপাতে একত্রে মিশিয়ে তা বিশেষ উপায়ে হাউসে জাগ দিয়ে ৪০-৪৫ দিন রেখে পচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যে কম্পোস্ট তৈরি করা হয়, তাই ট্রাইকো কম্পোস্ট আর কম্পোস্ট সার তৈরির সময় হাউস থেকে নির্গত তরল নির্যাসকে ট্রাইকো লিচেট বলে।
নবলোক পরিষদ’র পরিচালক এম শফিকুল ইসলাম বলেন, “ট্রাইকো কম্পোস্ট উৎপাদনে কৃষক দুইভাবে লাভবান হচ্ছেন। প্রথমত, এ সার জমিতে ব্যবহার করে কৃষকেরা ভালো ফলন পাচ্ছেন। অপরদিকে ট্রাইকো লিচেট ব্যবহার করে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি রোগবালাই দমনে তা ব্যবহৃত হচ্ছে। ফলে কৃষকদের রোগবালাই দমনে কীটনাশক ব্যবহার করতে হচ্ছে না।”তিনি আরও বলেন, ট্রাইকো কম্পোস্ট থেকে উৎপাদিত সার ও লিচেট ব্যবহার করে কৃষকেরা লাভবান হচ্ছেন। অন্য কৃষকদের মধ্যেও ব্যাপক আগ্রহ দেখা দিয়েছে। তাই ট্রাইকো কম্পোস্ট উৎপাদন ও লিচেট ব্যবহারে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
ডুমুরিয়া উপজেলা সিনিয়র কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ইনসাদ ইবনে আমিন বলেন অতিমাত্রায় রাসায়নিক সার ও কিটনাশক ব্যাবহারের ফলে মাটি হারাচ্ছে তার প্রাণ নষ্ট হচ্ছে মাটির স্বাস্থ্য।
কৃষিজ উৎপাদনে একমাত্র মাধ্যমে শক্তি ফেরাতে স্থায়িত্বশীল জৈব সারের উপর নির্ভরতা বাড়ছে খুলনার ডুমুরিয়ায়। নিরাপদ কৃষিখাত বিস্তারে ট্রাইকো কম্পোস্ট সার উৎপাদন, ব্যাবহার ও বাব্জারজাতের মধ্যদিয়ে নিরাপদ কৃষিখাত ও বিষমুক্ত নিরাপদ সবজি উৎপাদনে সহয়তা করছে,উপজেলা কৃষি অফিস। সার্বিক পরামর্শে উপজেলার বরাতিয়া গ্রামের কৃষক তুষার সরকারসহ প্রায় ৩০ জন কৃষকের মাধ্যমে এ ট্রাইকো কম্পোস্ট স্থাপন করে সার উৎপাদন ও ব্যবহার করে উপকৃত হচ্ছে এ অঞ্চলের কৃষকরা।